নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি- ম্যাথিউ মিলার

বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশে ভারতের প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটেছে- এমন অভিযোগ মানতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চীন ও রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত করছে কানাডা- এমন প্রসঙ্গ উঠে আসে। বলা হয় ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়েও তদন্ত করছে কানাডা। এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারি। প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। জবাবে তিনি বলেন, আপনি কানাডার তদন্তের বিষয়ে যে রেফারেন্স তুলেছেন, আমার কাছে এ বিষয়ে উত্তর নেই। এ বিষয়টির উত্তর কানাডাই দিতে পারবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের পর তৃতীয়বারের মতো ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। একই সঙ্গে বিরোধী দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করায় উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বনের আহ্বান জানান ম্যাথিউ মিলার।

তার কাছে সাংবাদিক মুশফিকের প্রশ্ন ছিল- ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছে যে, বাংলাদেশে নির্বাচনে চীন ও রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তের সঙ্গে ভারতের বিষয়েও যুক্ত করেছে কানাডা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে নির্বাচনে ভারতের যুক্ত থাকার বিষয়ে প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একপক্ষীয় নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনেও তাদেরকে ভারতের সমর্থন দেয়ার কথা গত সপ্তাহে প্রকাশ্যে বলেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সমালোচকরা বলছেন, ভারতের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে আপনার জবাব কি?
মুশফিকের এ প্রশ্নের উত্তরে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আপনি কানাডার তদন্তের যে কথা বলেছেন, সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো উত্তর নেই। এ বিষয়ে কানাডা বলতে পারবে। বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি বলবো- যেমনটা আমরা বহুবার বলেছি বাংলাদেশ ও অন্যদের বেলায়, তা হলো শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তায় অগ্রগতি। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে আছে। গণতান্ত্রিক নীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রাখছি আমরা। বাংলাদেশের সব মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ।

ম্যাথিউ মিলারের কাছে মুশফিক আরও জানতে চান- রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মী, যাদেরকে আটক রাখা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করেছে মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন। ৭ই জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে জালিয়াতি করার জন্য বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের, বিএনপির নেতাদের সহ বিরোধী ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে শাসকগোষ্ঠী। নির্বাচনের আগেই ঘোষিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতির প্রেক্ষিতে গণতন্ত্রকে কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর বাধা দেয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কি পদক্ষেপ নিচ্ছে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন নিয়ে এর আগেই আমাদের উদ্বেগ জানাতে শুনেছেন আপনি। আমরা দেখতে পেয়েছি ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমি দুটি জিনিস বলবো। এক, গ্রেপ্তার করা সবার বিষয়ে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং নাগরিক জীবনে বিরোধী দলীয় সদস্য ও মিডিয়ার পেশাদারদের, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ অনুমোদন করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। এসব দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এগিয়ে নিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রাখবো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *