রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকেণ্ডের ঘটনায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বহুতল ভবন-রেস্টুরেন্টের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি অথরাইজড জোনের নেতৃত্বে একটি জরিপ কার্যক্রম শুরু করেছে।
এ জরিপে ১০তলার বেশি উচ্চতার ভবনগুলোর অগ্নিঝুঁকির ব্যাপারে অনুসন্ধান করা হবে। যদিও যেসব ভবনে রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেসব ভবন ১০তলার কম হলেও সেখানে জরিপ পরিচালনা করবে সংস্থাটি। পরবর্তীকালে এ জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উচ্ছেদসহ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ১০তলা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ উচ্চতার ভবনগুলো জরিপ করব। তবে যেসব ভবনে রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেগুলো কম উচ্চতার হলেও সেখানে অনুসন্ধান চালানো হবে। খুব শিগগিরই জরিপ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, এরপর ভবনগুলোর মধ্যে বেশি অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনের ব্যাপারে আগে অভিযান চালানো হবে। পরবর্তীকালে কম ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোতে অগ্নিঝুঁকি হ্রাসে পদক্ষেপ নিতে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। আর ভবনে রেস্টুরেন্টের অনুমোদন ও অগ্নিঝুঁকি রোধে ব্যবস্থা সবকিছু ডিটেইলস অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সিডিএর অনুমোদন নিয়ে নগরে মোট ভবন নির্মিত হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার ১১১টি। এর মধ্যে একতলা ভবন রয়েছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ৫টি, দুই থেকে পাঁচ তলা উচ্চতার ভবন রয়েছে ৯০ হাজার ৪৪৪টি, ছয় থেকে ১০তলা উচ্চতার ভবন রয়েছে ১৩ হাজার ১৩৫টি। ১১তলা থেকে ১৫তলা ভবন রয়েছে ৪৩১টি, ১৬তলা থেকে ২০ উচ্চতার ৮৬টি, ২০তলা থেকে সর্বোচ্চ ৩৩তলার ভবন রয়েছে ১০টি।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য মতে, ২০২১-২০২৩ এই তিন বছরে চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে পাঁচ হাজার ৯০৯টি। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৪৭ জন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভবনের ‘কাচ্চি ভাই’ নামে রেস্তোরাঁয় রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং তা দ্রুত ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকার বিভিন্ন স্টেশন থেকে আটটি ইউনিট সেখানে পৌঁছায় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে আরও চারটি অগ্নিনির্বাপক ইউনিটকে যুক্ত করা হয়।
পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করেন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা এক যোগে কাজ করে রাত ১২টার একটু আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন পরে বলেছিলেন, ওই ভবনে একটাই দোকান ছিল এবং বাকি সব কটা ছিল রেস্টুরেন্ট। ভবনের চারদিকে গ্যাসের সিলিন্ডার ছড়ানো ছিটানো ছিল। ওইগুলোর একটি কিংবা গ্যাসের চূলায় বিস্ফোরণের কারণে আগুন ধরতে পারে।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুজনের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যালে রয়েছে।
গেল রবিবার তাদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১৪ জনের মধ্যে বাসায় ফিরেছেন ১১ জন। এখনো ভর্তি আছেন তিনজন। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও দুজন।