মসজিদের ৫০ কোটি টাকা লোপাটে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

রাসেল মোল্লা,কলাপাড়া: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুবুর রহমান, সাবেক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে মসজিদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে রেকর্ডপত্র সরবরাহে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও কলাপাড়া ইউএনও এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে রেকর্ড পত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। পত্র প্রাপ্তির সাত কার্য দিবেসের মধ্যে চাহিত রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে। দুদক অনুসন্ধান কমিটির দল নেতা ও দুদক, পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ রেকর্ড পত্র চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, দুদকের চাহিত রেকর্ড পত্রের মধ্যে ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে কলাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ উন্নয়নে উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান অধিদপ্তর, ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে সরকারী বরাদ্দের পরিমান এবং কোন কোন উন্নয়নমূলক খাতে উক্ত বরাদ্দের অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ড পত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে। মসজিদের নিজস্ব জমি থেকে পায়রা পোর্টের অধিগ্রহনকৃত জমির ক্ষতিপূরনের টাকার বিষয়ে সৃস্পষ্ট তথ্য ও রেকর্ডপত্র, ২০০৯-১৩ সাল পর্যন্ত মসজিদ মাঠের জমি ভাড়া এবং মার্কেট ভবন থেকে আদায়কৃত অর্থ মসজিদ ফান্ডে যথাযথ ভাবে জমা হয়েছে কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র, পুরাতন মসজিদ ঘর, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের আবাস ঘর, মসজিদের পাঠাগার, মসজিদের সামনের মার্কেট বিক্রীর ক্ষেত্রে যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরন করা হয়েছিল কিনা এবং তা পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র, ২০০৯-১৯ সাল পর্যন্ত মসজিদের পুকুর থেকে মাছ বিক্রী করে মসজিদ ফান্ডে যথাযথ জমা হয়েছে কিনা সে তথ্য ও রেকর্ড পত্র, মসজিদের কৃষি জমি একসনা লাগিয়ে এবং মসজিদের দান বাক্স থেকে জমাকৃত অর্থ মসজিদ ফান্ডে যথাযথ ভাবে জমা হয়েছে কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র, মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত ব্যতীত এবং ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে মসজিদের কোন জমি বিক্রী করা হয়েছে কিনা, কার কাছে বিক্রয় করা হয়েছে এবং বিক্রীত জমির মূল্য কত ছিল সে সংক্রান্ত তথ্য ও উক্ত জমি বিক্রয়ে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র, দলিল নং-৩৭৯৭/১৭, ৯৯২/১৫, ৩৭৯৬/১৭, ৯৯৩/১৫ এর মাধ্যমে বিক্রীত জমির তথ্য এবং তা আইন ও মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়েছিল কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র, দলিল নং-৮২২৬-২৯/১১, ১০৪৭/১২, ৩৪৪৪-৪৬/১২, ৬০৬০-৬১/১২, ১৫৭/১৩ এর মাধ্যমে বিক্রীত জমির তথ্য এবং তা আইন ও মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়েছিল কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র, ৫৮০৬/১১ নং ও ৪৭৬০/১২ নং দলিলের মাধ্যমে মসজিদের নামে জমি ক্রয় করা হয়েছে কিনা এবং তা আইন ও মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়েছিল কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র, কলাপাড়া এতিমখানা গোরস্থান সংলগ্ন মার্কেট ও জমি থেকে উত্তোলিত ভাড়ার পরিমান ও তা যথাযথ ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি প্রেরনের জন্য মসজিদ কমিটির সভাপতিকে অনুরোধ করা হয়েছে।

খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও কলাপাড়া ইউএনও মো: জাহাঙ্গীর হোসেন দুদকের পত্র প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ’মসজিদের সকল তথ্য রেকর্ড পত্র থাকে মসজিদ কমিটির সম্পাদকের কাছে। আমার অফিসে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই।’

মসজিদ কমিটির সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বিশ^াস বলেন, ’দুদকের চিঠির বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি জরুরী কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি।’

এদিকে দুদকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অভিযোগ অনুসন্ধানে রেকর্ড পত্র চেয়ে মসজিদ কমিটিকে পুন:রায় চিঠি দেয়া হবে। দুদক আইন ও বিধি অনুসরন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *