নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে বিজিবি ও র‍্যাব মোতায়েন

স্টাফ রিপোর্টারঃ   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় শুক্রবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে এক হাজার ১৫১ প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাবের ৭ শতাধিক টহল টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী র‌্যাব ফোর্সেস শুক্রবার থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সব নির্বাচনি এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‌্যাব ১০টি উদ্যোগের কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-১. নির্বাচনি এলাকায় সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন। ২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা। এছাড়া ভোটকেন্দ্র ও ভোট গণনার ক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন। ৩. নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিটি আসনে কমপক্ষে দুটি টহল দল মোতায়েন ও প্রতিটি ব্যাটালিয়নে দুটি টহল স্ট্রাইকিং রিজার্ভ থাকবে। ৪. র‌্যাব সদর দপ্তরে ১৫টি টহল দল সেন্ট্রাল রিজার্ভ হিসাবে প্রস্তুত থাকবে। দেশব্যাপী ২৫টি অস্থায়ী র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। এছাড়া অন্যান্য স্থানে মোতায়েনের জন্য ৫০টি টহল দল প্রস্তুতসহ দেশব্যাপী সর্বমোট ৭০০টির অধিক টহল দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। ৫. গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং নিজস্ব সুইপিং ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা হবে। ৬. অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ/গুরুত্বপূর্ণ আসন বিবেচনায় মোতায়েনের জন্য বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন থেকে টহল দল গুরুত্বপূর্ণ/ঝুঁকিপূর্ণ আসন বিবেচনায় মোতায়েনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। ৭. বিশেষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের স্পেশাল ফোর্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। ৮. র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ৭টি জোনে বিভক্ত হয়ে মোতায়েনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। ৯. র‌্যাব ডগ স্কোয়াডের ১০টি দল র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশির মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। ১০. নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও গোয়েন্দা সূত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আসনসমূহে অধিক টহল নিয়োজিত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিজিবির এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শুক্রবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ১ হাজার ১৫১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে কাজ করবে। সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামবে।

চট্টগ্রামে ৭৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৯ দিন আগেই চট্টগ্রামে নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছেছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় নগরীর চট্টগ্রাম জিমনেসিয়াম থেকে এসব সরঞ্জাম বিভিন্ন উপজেলায় বণ্টন শুরু হয়। এরমধ্যে রয়েছে অমুছনীয় কালি, কলম, রাবার, স্টিকার, মোমবাতি, দিয়াশলাই ও বিভিন্ন ফরম। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা এসব সরঞ্জাম নিজ নিজ উপজেলায় নিয়ে গেছেন। এদিকে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামে ৭৪ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে টহল শুরু করেছে বিজিবি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ৬৩ লাখ ১৪ হাজারের বেশি ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে জেলার ১০টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে রয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এবং নগরীর ৬টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। এসব আসনে মোট ২ হাজার ২৩টি কেন্দ্র রয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের সময় ব্যবহৃত সরঞ্জাম চট্টগ্রামে পৌঁছতে শুরু করেছে।

শুক্রবার এসব সরঞ্জাম কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় নিয়ে যায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচনি সরঞ্জাম চট্টগ্রামে চলে আসার কথা রয়েছে।

বিজিবি চট্টগ্রাম-৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামে ৭৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় ২৯ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে কাজ করবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *