‘তোফাজ্জলের মা-বাবা, ভাই-বোন কেউ নাই। রাত ১১টার সময় আমার বাবাকে ফোন দেওয়া হইছে। আপনি কি তোফাজ্জলের মামা? আমার আব্বা ফোন ধরছে। তখন বলছে, ওরে (তোফাজ্জল) আমরা আটকাইছি, হলেই আছে, ওরে নিতে হলে টাকা দিতে হবে ৩৫ হাজার। ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ওরে ছাড়াই নেন, না হলে আমরা ওরে ছাড়ব না, আরও মারবো।’
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যম চ্যানেলে সাক্ষাতে এ কথাগুলো বলছিলেন তোফাজ্জলের মামাতো বোন।
‘পরে আমি ওই লোককে ফোন দিয়েছি, আমি তোফাজ্জলের মামাতো বোন, তাকে কেন মারছেন। ওরা বলছে, ও (তোফাজ্জল) আমাদের হলে ঢুকছে বা…। তখন আমি বলেছি, দেখেন ও তো পাগল মানুষ, যদি অন্যায়ও করে প্রশাসনের কাছে দেন। ওরে মাইরেন না। কিন্তু ওরা বলে- একটা পাগলের কীভাবে মামার নাম্বার মুখস্ত থাকবে। চাচাতো ভাইয়ের নাম্বারও মুখস্ত, তাহলে কীভাবে পাগল হয়?’
‘তখন বলেছি, তোফাজ্জল অনেক মেধাবী ছিল, ওর মা-বাবা, ভাই-বোন কেউ নেই বলতে গেলে। আমার ফুফু (তোফাজ্জলের মা) মারা যাওয়ার পর থেকেই ওর মাথায় সমস্যাটা হয়েছিল। আপনি খাবার খাচ্ছেন, টান দিয়ে নিয়ে খাইলো…ক্ষুধার জ্বালায় টাকা নিলো চেয়ে…এরকম। ওর বাবা মারা যায় রোড এক্সিডেন্টে ৮ বছর আগে। পাঁচ বছর আগে মা মারা গেছে লিভার ক্যান্সারে। তারপর ছিল দুই ভাই। ভাই ছিল নাজিরপুর থানার এসআই, গত বছর রোজায় সেও ক্যান্সারে মারা গেছেন। ভাই মারা যাওয়ার পরে তোফাজ্জল একেবারে পাগল হয়ে যায়।’
তোফাজ্জলের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তার মামাতো বোন বলেন, ‘যে মানুষটা চার বছর আগে পাগল হয়ে গেছে, সে কীভাবে রাজনীতি করবে। মাঝে মাঝে তো ওর পরনের কাপড়ও থাকতো না…। একজন খুনি হলেও তো জীবন্ত মেরে ফেলতে পারে না। একটা কুকুরকেও তো কেউ এইভাবে মারতে পারে না…।’
যারা যারা তোফাজ্জলকে হত্যায় জড়িত তাদের আইনের অধীনে সর্বোচ্চ বিচার চান তিনি। আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘মারছে, ভাত খাওয়াইছে, এরপর আবার মারছে, ভাত খাওয়াইছে। একটা মানুষকে তো এভাবে মাইরা ফালায় না! সে যদি খুনিও হয়, এভাবে জীবন তো নিতে পারে না।’
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন (৩২)। তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবার নাম (মৃত) আবদুর রহমান।