হামলা-পাল্টা হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিরাজ করছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে উত্তেজনা। পশ্চিমা দেশগুলোর হস্তক্ষেপ যা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার আহ্বানে নিউইয়র্কের জাতিসংঘের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক।
বৈঠকে রাশিয়া ও চীনের তোপের মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে তারা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা ছাড়াই নিজেদের স্বার্থে অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন অভিযান আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে দাবি করে ইরান। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য- আত্মরক্ষায় ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে ওয়াশিংটন।
প্রথমে হুতি বিদ্রোহীদের দমনে ইয়েমেনের ভূখণ্ডে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তারপর ইরাক ও সিরিয়ায় শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে হুতি, হিজবুল্লাহসহ প্রতিরোধ বাহিনীগুলো। এর কড়া জবাব দেয়ার- পাল্টা হুঁশিয়ারি তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। যার জন্য পুরোপুরিভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছে রাশিয়া ও চীন। কড়া ভাষায় জানিয়েছে নিন্দা।
রাশিয়ার প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়া এ বিষয়ে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার জন্য পৃরোপুরিভাবে দায়ী যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারা সবসময়ই দায়মুক্ত থাকতে চায়। এদিকে, এগিয়ে আসছে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই নির্বাচনী প্রচারণা আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকান প্রশাসনের বিপর্যয়কর ভাবমূর্তি নিয়ে তাদের উদ্বেগ থাকতে পারে। কিন্তু, চলমান সংঘাত যে আন্তর্জাতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়তে পারে কিংবা বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে- তা ওয়াশিংটন মাথায় নিচ্ছে না।
ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলছে ইরান। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে কৌশলগত ভুল বলে আখ্যা দিয়েছে তেহরান। তাদের দাবি, পশ্চিমাদের এসব অযাচিত হস্তক্ষেপ শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, পুরো বিশ্বের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
ইরান প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটি দেশ দুটির আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতারও একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন। বেআইনী এসব হামলা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি তো নষ্ট করছেই আন্তজার্তিক স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, আত্মরক্ষায় চালানো হচ্ছে এসব অভিযান। নতুন করে কোনো যুদ্ধ চায় না যুক্তরাষ্ট্র। বরং গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে কাজ করছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি রবার্ট উড বলেন, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যে অভিযান চালানো হয়েছে তা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে। গত ২৮ জানুয়ারি জর্ডান সীমান্তে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে তিন মার্কিন সেনা। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কোথায়? মার্কিন বাহিনী যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চায় না, কিন্তু আত্মরক্ষায় যা প্রয়োজন তা করবে ওয়াশিংটন।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে শান্ত হয়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি ডিকারলো বলেন, চলমান এই সংঘাতে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে নিরস্ত্র নিরীহ মানুষদের। ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতিতে পড়তে হচ্ছে অঞ্চলগুলোকে। তাই, সবপক্ষকে শান্ত হয়ে পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাছাড়া, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রকেই সংযত হতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।