স্টাফ রিপোর্টারঃ ৫ মাস রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় তিনি গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ পৌঁছান। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। এর আগে বিকাল ৫টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবনে ফেরার পথে বেগম জিয়ার গাড়ীর সঙ্গে সঙ্গে আসেন দলটির নেতাকর্মীরা। এসময় তারা বেগম জিয়ার মুক্তিসহ সরকারবিরোধী নানা ¯েøাগান দেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) বাসায় গেছেন। বোর্ড এখন তার চিকিৎসা বাসায় গিয়ে করবে।
গত ৯ অগাস্ট গুরুতর অসুস্থ হয়ে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী আথ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসহ প্রভৃতি রোগে ভুগছেন।
গত অক্টোবরে মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রæত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এরপর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আবারও বিদেশ নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে। তবে আইনে সে সুযোগ না থাকায় এ অনুমোদন দেয়নি সরকার। এ চেষ্টার মধ্যে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত¡াবধানে চিকিৎসার পাশাপাশি বিদেশ থেকেও চিকিৎসক এসে তার চিকিৎসা দেন।
গত ২৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদ আহমাদ আবদুর রব, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস এবং হেপাটোলজির অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসে পর দিন জরুরিভাবে তার লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করেন।
দুই মামলায় দÐিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার দÐ স্থগিত করে সপ্তমবার বর্ধিত মুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। এর আগেই তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে স¤প্রতি অষ্টমবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়।
মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শর্ত দুটি হল-খালেদা জিয়া আগের মতোই ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।