মেসির মতো এত ট্রফি ছোঁয়া হয়নি আর কোনো খেলোয়াড়ের

বার্সেলোনা ক্লাবের হয়ে একের পর এক ট্রফি আর রেকর্ড বইয়ের নতুন নতুন গল্পের রূপকার লিওনেল মেসি। জাতীয় দলের জার্সিতেও আলো ছড়িয়েছেন এই ফুটবল জাদুকর। তবে আকাশি-সাদা জার্সিতে কোনোভাবেই ট্রফি ছোঁয়া হচ্ছিল না মেসির। ফাইনালে হেরে কান্না, অভিমান ও কষ্টে অবসর নেয়া, আবার ফিরে আসা। কী ছিল না মেসির ক্যারিয়ারে? তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দুইভাগে ভাগ করা যায়। ২০২১ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী। আগেরটি অংশটি মেসির ব্যর্থতার হলে পরের অংশে আছে শুধুই সাফল্য।

এলএম-টেন জাতীয় দলে খেলা শুরুর পর আর্জেন্টিনা প্রথম ২০০৭ কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছিল। তবে সেবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে হেরে রানারআপ হতে হয় আলবেসেলেস্তেদের। ২০১০ বিশ্বকাপেও আগেভাগে বিদায় নিতে হয় আর্জেন্টিনাকে। ইতোমধ্যেই ফুটবল বিশ্বে সেরা তারকার তকমা জুটে গেছে মেসির। ফুটবল বিশ্ব বুঁদ তার বাঁ-পায়ের জাদুতে। এরপর ২০১১ কোপা আমেরিকাতেও হতাশ হয়ে ফেরেন মেসি।

সবচেয়ে বেশি কষ্টটা বোধহয় মেসি পেয়েছিলেন ২০১৪ সালে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফাইনালে গিয়েও আরাধ্য ট্রফি ছোঁয়া হয়নি এই ফুটবল জাদুকরের। মারিও গোৎসের দেয়া একমাত্র গোলে শিরোপা হারায় মেসিবাহিনী। সেদিন ট্রফির দিকে মেসির অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য কাঁদিয়েছিল আর্জেন্টিনা ভক্তদের। ওই আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন এলএম-টেন। যদিও তিনি রাখঢাক না রেখে সেসময় বলেই দিয়েছিলেন, সেরা পুরস্কার কিংবা ব্যক্তিগত অর্জন তিনি চাননি, চেয়েছিলেন দলের জন্য একটি শিরোপা।

বিশ্বকাপ হারার ক্ষত নিয়ে পরের বছরই কোপার মিশনে নামেন মেসি-ডি মারিয়ারা। আবারও দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। তবে এবারও শিরোপা ছোঁয়ার সুযোগ হয়নি মেসিদের। কখনো কোপা চ্যাম্পিয়ন হতে না পারা চিলির কাছে ট্রাইব্রেকারে হেরে রানারআপ হয়ে ঘরে ফেরে আকাশি-সাদারা। ২০১৬ সালে বসেছিল কোপার মর্যাদাপূর্ণ শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিশেষ আয়োজন। যথারীতি আবারও ফাইনালে যায় মেসির দল। এবারও মেসিদের দিকে মুখ তোলেনি ভাগ্য বিধাতা। টানা দ্বিতীয়বার চিলির কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত থাকতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে।

২০১৪ থেকে ২০১৬, টানা তিন বছরে তিনটি ফাইনালে গিয়ে হার আর ফাইনালে পেনাল্টি মিস! এসব যন্ত্রণা না সইতে পেরে আন্তর্জাতিক ফুটবলকেই বিদায় বলে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর মেসি। এরপর ঘটে গেল কত কী! মেসিকে ফুটবলে ফেরাতে কে না চেষ্টা করেছেন। কিংবদন্তি ফুটবলার থেকে শুরু করে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্টও একাধিকবার মেসিকে অনুরোধ করেন অবসর ভেঙে ফেরার জন্য। সবার অনুরোধে এরপর আবার অবসর ভেঙে ফেরেন এলএম-টেন।

মেসির পুণঃঅভিষেকের পর মাঝে কেটে গেছে আরেকটি বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকা। তবে শিরোপা খরা আর ব্যর্থতা পিছু ছাড়েনি তাদের। ২০২১ সালে যেন ফুটবল বিধাতা মুখ তোলেন মেসিদের দিকে। তাইতো সেবার ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা জয়ের স্বাদ পায় আর্জেন্টিনা। একইসাথে ২৮ বছরের শিরোপা খরা দূর হয় আলবেসেলেস্তেদের। আনন্দে ভাসেন মেসি-ডি মারিয়ারা। পরের বছর ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে উড়িয়ে ফাইনালিসিমা জেতেন লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।

আর সবচেয়ে বড় অর্জনটি আসে ২০২২ সালে কাতারে। মেসির আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি ধরা দেয় কাতারের লুসাইলে। বিশ্বকাপ জয়ের পর যেন ফুটবলের সবকিছুই পাওয়া হয়ে যায় মেসির। রোনালদো না মেসি কে সর্বকারের সেরা সেই বিতর্কেও ইতি টানেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দেবেন মেসি। তবে তিনি জানান, ‘থ্রি স্টার’ জার্সিতে খেলা চালিয়ে যেতে চান। তিনি ফুটবলটাকে উপভোগ করতে চান।

মেসির ক্যাবিনেটে এখন জাতীয় দলের চার-চারটি ট্রফি। এরমধ্যে মেজর ট্রফিই তিনটি। সবমিলিয়ে ৪৫টি ট্রফি তার ক্যাবিনেটে। মেসির মতো এত ট্রফি ছোঁয়া হয়নি আর কোনো খেলোয়াড়ের। ৮টি ব্যালন ডি’অর, ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল দুইটি। সঙ্গে শত শত রেকর্ড। তাই বলা যায়, এক সময়ের ‘রুষ্ট ‘ ফুটবল বিধাতা যেন এখন দু’হাত ভরে আশীর্বাদ দিচ্ছেন মেসিকে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *