মধ্যরাতে জাবিতে মেয়েদের আবাসিক হল থেকে বহিরাগত যুবক আটক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের আবাসিক হলের একটি কক্ষ থেকে বহিরাগত এক যুবককে আটক করেছে হল কর্তৃপক্ষ। হলের এক নারী শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় হলে প্রবেশ করেন বলে জানায় অভিযুক্ত। 

জাবির ফয়জুন্নেসা হলে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত পৌণে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

আটক যুবকের নাম আশরাফুল আলম পারভেজ। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে তার বাড়ি। বর্তমানে গাজীপুরে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ ব্যাচের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অর্পা খন্দকার চাঁদনীর কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। ওই যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ে হিম উৎসব দেখতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন।

এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রীদের আবাসিক হলের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং হলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় জড়িতদের যথাযথ আইন ও নিয়মানুযায়ী শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাত পৌণে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান হিম উৎসব দেখা শেষে অর্পার সহায়তায় হলে প্রবেশ করেন আশরাফুল। অর্পা আশরাফুলকে হলের তৃতীয় তলায় তার কক্ষে নিয়ে যান। তবে প্রবেশের সময় হল গেইটের গার্ড ও অন্যান্যরা যাতে টের না পায়, সেজন্য আশরাফুল কপালে টিপ ও গায়ের চাদর মুড়িয়ে প্রবেশ করেন। তবে ওই ছেলে কক্ষে গিয়ে চাদর খুলে ফেললে আশেপাশের কক্ষে থাকা ছাত্রীরা তাকে শনাক্ত করে।

এ সময় ছাত্রীরা আশরাফুলকে আটক করে হল প্রভোস্টের কক্ষে নিয়ে আসে। পরে হল প্রভোস্ট এসে প্রক্টরিয়াল বডিকে খবর দেয়। এক পর্যায়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি পরিদর্শক দলের কাছে আশরাফুলকে সোপর্দ করা হয়।

সেসময় হলের ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ওই যুবককে জুতাপেটাও করে।

অভিযুক্ত আশরাফুল জানান, অর্পার সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয়। হিম উৎসব দেখা শেষে থাকার জায়গা না থাকার কথা অর্পাকে জানান তিনি। তখন অর্পা তাকে হলে নিয়ে আসে।

অপর দিকে অর্পা খন্দকার বলেন, ‘আশরাফুলের অন্য কোথাও থাকার জায়গা না থাকায় হলে নিয়ে আসি আমি।’

হল কর্তৃপক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীর সাথে কপালে টিপ, মুখে ঘোমটা দিয়ে প্রবেশ করে। এসময় কয়েকজন পোশাক ও হাটা দেখে আশেপাশের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সন্দেহ হয়। পরে তারা হল সুপারকে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে বলেন। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে হল সুপারসহ ওই নারী শিক্ষার্থীর কক্ষে গিয়ে অভিযুক্ত পারভেজ সহ একসাথে দেখতে পান তারা।

এরপর পারভেজকে আটক করে হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে পুলিশে দেওয়া হয়।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের হল সুপার নাদিয়া সুলতানা বলেন, ‘হলের মেয়েরা ওই ছাত্রীর রুমে সেই পুরুষের উপস্থিতি বুঝতে পেরে আমাকে জানালে তৎক্ষনাৎ আমি হলের খালাকে সাথে নিয়ে রুমে যাই। দরজা খোলার পর আমি তাকে খাটের উপরে বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই। তৎক্ষনাৎ আমি হল প্রভোস্টকে জানাই।’

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছাত্রীরা ফোন করে জানায় হলে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি এবং প্রক্টোরিয়াল বডিকে বিষয়টি অবগত করি। পরে প্রক্টোরিয়াল বডি আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে ওই যুবককে হস্তান্তর করে। আর এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত আমরা তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। রোববার সকালে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *