বিশ্ব যখন ব্যস্ত নতুন বছর বরণে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত গাজায় তখন কেবলই আর্তনাদ। আপনজন- ঘরবাড়ি হারানো উপত্যকার মানুষগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাণ বাঁচাতে ছুটছেন দিগ্বিদিক। ধ্বংসস্তূপের জনপদে বৃষ্টি আর তীব্র শীত মানুষের দুর্দশা বাড়িয়েছে আরও। ইসরায়েলের বর্বরতা থামার কোনো লক্ষ্মণ নেই; তবুও অসহায় ফিলিস্তিনিরা আছেন নতুন বছরে শান্তি নেমে আসার প্রত্যাশায়।
মাত্র ১৫ মাসের ব্যবধানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। বর্বরতার সব মাত্রা অতিক্রম করে একটি জনপদের পুরো চিত্রই বদলে দিয়েছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হয়েছিলো যে আগ্রাসন তা ২০২৪ সাল জুড়েই অব্যাহত ছিলো।
ইসরায়েলের হামলা থেকে বাঁচতে গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গত বছরজুড়ে ছুটে বেরিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। বুলেট-বোমার আঘাতে গাজায় চলমান আগ্রাসনে প্রাণ গেছে ৪৫ হাজার ৫শ’র বেশি মানুষের। খাবারের অভাবে ক্ষুধা আর তৃষ্ণায়ও প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। বৃষ্টির সাথে তীব্র শীত। হাইপোথারমিয়ার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হচ্ছে শিশুদের। এমন দূর্বিষহ জীবন গত বছর পার করেনি আর কোনো জাতি।
বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে যখন চলছে নববর্ষ বরণের জমকালো আয়োজন, গাজায় তখনও চলছে ফিলিস্তিনিদের প্রাণ বাঁচানোর লড়াই। দিগ্বিদিক ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত মানুষেরা নতুন বছরে নতুন কিছুর স্বপ্ন বুনছেন। তাদের আশা, ২০২৫ সালে বন্ধ হবে তাদের ওপর বর্বরতা।
এক ফিলিস্তিনি নারী বলেন ‘আমরা শীতের মধ্যে তীব্র ক্ষুধা আর তৃষ্ণা নিয়ে বেঁচে আছি। শীতের জামা নেই, কম্বল নেই। রাতভর বৃষ্টির কারণে তাবুর ভেতর প্রবেশ করে পানি। গতবছর আমরা রাফায় ছিলাম। এর আগে ছিলাম বেত লাহিয়ায়। পরে আবার রাফায় যাই, এরপর আসি খান ইউনিসে। জানিনা আগামী বছর আবার কোথায় যেতে হয়। তবু নতুন বছর ভালো কিছুর প্রত্যাশায় আছি।’
একজন ফিলিস্তিনি প্রবীণ বলেন,নতুন আরও একটি বছর শুরু হলো। আশা করছি বিশ্বের অন্য মানুষেরা যেভাবে বাঁচে আমরাও নতুন বছর সেভাবেই বাঁচতে পারবো। আমাদের সন্তানেরা পৃথিবীর বাকি সবার মতোই নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকতে পারে যেন। আমরা বেঁচে থাকার অধিকার চাই।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনিদের এখন একটাই চাওয়া-নতুন বছর যেন উপত্যকায় আগ্রাসন বন্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।