‘ওজেম্পিক’ বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করবে!

টাইপ-২’ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এমন একটি ওষুধ, যেটি বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর কিংবা বিলম্ব করতে পারে বলে জানান গবেষকরা।

ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক হারলান ক্রুমহোলজ বেশ কয়েকটি নতুন গবেষণা প্রকাশের পর বলেছেন যে, ‘সেমাগ্লুটাইড’ যা ‘ওজেম্পিক’ নামে বেশি পরিচিত; এটি ব্যবহারে সুদূরপ্রসারী সুবিধা রয়েছে।’

‘সেমাগ্লুটাইড’ ইনজেকশন ইনক্রিটিন মাইমেটিক্স নামক ওষুধের একটি শ্রেণিতে রয়েছে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে অগ্ন্যাশয়কে সঠিক পরিমাণে ইনসুলিন মুক্ত করতে সাহায্য করে। ইনসুলিন রক্ত ​​থেকে চিনিকে শরীরের অন্যান্য টিস্যুতে সরাতে সাহায্য করে, বিশেষকরে যেখানে এটি শক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়।

অধ্যাপক হারলান ক্রুমহোলজ গবেষণায় দেখেছেন যে ওষুধটি হার্ট ফেইলিওর, আর্থ্রাইটিস, আলঝেইমার এবং এমনকি ক্যান্সারের সাথে যুক্ত বিভিন্ন রোগের চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

গতকাল শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি কনফারেন্স ২০২৪-এ গবেষণাগুলো উপস্থাপন করা হয়েছিলো। কনফারেন্সে অধ্যাপক ক্রুমহোলজ উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘এটা আমাকে একেবারে-ই অবাক করবে না যে এই ওষুধ মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে সাথে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে-ও ধীর করে দেবে।”

নতুন গবেষণাটি আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি (জেএসিসি) জার্নালসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যা মূলত অধ্যাপক ক্রুমহোলজ সম্পাদনা করেন।

“এই যুগান্তকারী ওষুধগুলি কার্ডিওভাসকুলার বিভাগে বিপ্লব ঘটাতে প্রস্তুত এবং নাটকীয়ভাবে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য বিভাগকে উন্নত করতে পারে,” অধ্যাপক ক্রুমহোলজ যোগ করেন।

গবেষণাগুলো পরীক্ষার জন্য, ‘৪৫ কিংবা তার বেশি বয়সী মানুষদের’ নিয়ে করা হয়েছে। এই পরীক্ষামূলক গবেষণায় মোট ১৭ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি লোককে ট্র্যাক করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম সেমাগ্লুটাইড বা একটি প্লাসিবো দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে দেয়া হয়। এরপর এই পরীক্ষামূলক গবেষণার রেজাল্ট সবার সামনে তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের ছিল এবং তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগ ছিল। তবে, তাদের ‘ডায়াবেটিস’ ছিল না।

গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, যারা ওষুধটি গ্রহণ করেছিলেন তারা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা এবং ‘কোভিড-১৯’-সহ সমস্ত রোগের কারণে মারা যাননি। তারা ওষুধটির কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া ছাড়া স্বাভাবিক কারণে মৃত্যু বরণ করেন।

ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহার করা লোকেদের কোভিড ধরা পড়ার সম্ভাবনা ছিল ঠিক, তবে তাদের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল কম। ‘সেমাগ্লুটাইডে’ মারা যাওয়ার হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে, প্ল্যাসিবো গ্রহণে মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

অন্যদিকে, নারীরা-ও খুব কম কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। তবে, ওষুধটি নারী কিংবা পুরুষ; সবার ক্ষেত্রে কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা কিংবা ঝুঁকি কমিয়েছে।

এটি হার্টের ফেইলিউরের লক্ষণগুলিকেও কম করে। সেই সাথে, শরীরে প্রদাহের মাত্রা হ্রাস করে, বিশেষকরে, ব্যবহারকারীদের ওজন হ্রাস করুক বা না করুক; উভয় পরিস্থিতিতে-ই।

গবেষণার প্রধান লেখক এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিনের অধ্যাপক ড: বেঞ্জামিন সিরিকা বলেন, গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ‘অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতাসহ অনেক রোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।”

তবে তিনি সংবাদ সংস্থা পিএ নিউজ এজেন্সিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে সেমগ্লুটাইড-এর মতো শক্তিশালী ইনক্রিটিন-ভিত্তিক থেরাপির মাধ্যমে এই রোগগুলোর ঝুঁকি সংশোধন করা যেতে পারে।

প্রেসক্রিপশন ড্রাগটি যুক্তরাজ্যের পাবলিকলি ফান্ডেড হেলথ কেয়ার সিস্টেম ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)-এর মাধ্যমে দেয়া হয়, যা ক্ষুধা দমন করে। এটি ‘উইগভি’ ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হয়। ‘উইগভি’ স্থূলতা চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, ‘ওজেম্পিক’ ডায়াবেটিসের জন্য।

ওষুধটি একটি ইনজেকশন আকারে আসে এবং ‘জিএলপি-১’ হরমোনের অনুকরণ করে। এটি সেবনের ফলে ব্যবহারকারী তৃপ্ত এবং কম ক্ষুধার্ত বোধ করে।

তবে বিশেষজ্ঞরা অতীতে সতর্ক করেছেন যে ওষুধটি ‘দ্রুত সমাধান’ কিংবা ভাল খাওয়া এবং ব্যায়ামে বিকল্প নয়। এবং এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দেয়া উচিত।

যেকোনো ওষুধের মতো এটিতে-ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ঝুঁকিও থাকতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে বমি বমি ভাব, পেট খারাপ, গ্যাসজনিত সমস্যা।

 

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *