বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে ফেডারেল স্টেট না। এখানে এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার হবার ফলে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার পাশাপাশি ব্যপক প্রভাবও বিদ্যমান ছিল সবশেষ আওয়ামী সরকারের আমল পর্যন্তও। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সেই সরকারের আমল থেকেই। এতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি অনেকটা নামেমাত্র অলঙ্কৃত একটি পদ হিসেবে বিবেচ্য ছিল বলেও অভিযোগ এসেছে একাধিক সময়ে। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুসারে এবার সেই ক্ষমতায় এসেছে ব্যপক রদবদল। পরিবর্তন ও সীমাবদ্ধতা এসেছে এই দুই পদের মেয়াদের ক্ষেত্রেও।
রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়া বলতে এর আগে কেবলমাত্র সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে সরকার গঠন করেছে, তাদের প্রার্থীর জয় অনেকটা অনুমেয় হিসেবে ধরা ছিল। কারণ ৩০০ সংসদ সদস্যের ভেতর যারা ন্যূনতম ১৫১ আসন পেয়েছে তারাই সরকারে থাকতো। অপরদিকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেয়া এক প্রকার আবশ্যিক এমপিদের কাছে। এবার প্রস্তাবনায় এসেছে পরিবর্তন। ইলোক্টোরাল কলেজ সিস্টেমে হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্যের পাশাপাশি উচ্চকক্ষ ও স্থানীয় সরকার কাঠামোর একাধিক জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে যে ভোটাররা তারাই নির্বাচিত করবেন রাষ্ট্রপতি। সার্বিকভাবে নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে আর সেই দলের মনোনয়ন পেলেই সেই ৩০০ জন এমপির ভোটে এখন আর রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হবার সুযোগ পাচ্ছেন না কেউ।
প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হবার বিষয়টা আগের মতোই থাকছে। তবে নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সংসদ নেতা হিসেবে এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে দেখা গেলেও এটির বিপরীত প্রস্তাবনা এসেছে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী একইসাথে সংসদ নেতা হতে পারবেন না। তিনিও সর্বোচ্চ দুইবার সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বা আট বছরের বেশি এই পদে থাকতে পারবেন না। হতে পারবেন না রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা প্রধান।
এতদিন দেশে সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল ৩৫০ জন। এদের মধ্যে ৩০০ জন জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে সংসদে আসতো। অপরদিকে ৫০ জন নারী সংসদ সদস্য মূল দলের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দল যতগুলো আসন বরাদ্দ পেত, তার ভিত্তিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারতো। বলা যায় গড়ে ৬টি আসনের বিপরীতে একটি নারী আসন পেত দলগুলো। সরাসরি নির্বাচন হত না। এবার সেই সিস্টেমেও আসছে পরিবর্তন। নারী সংসদ সদস্যদেরও সরাসরি ভোটের মাধ্যমে পার্লামেন্টে আসন নিশ্চিত করতে হবে।
এবার দ্বিকক্ষের আইনসভার প্রেক্ষাপটে দেশে বেড়ে যাবে এমপির সংখ্যা। উচ্চকক্ষ বা সিনেটের ক্ষেত্রে ১০৫ জন সংসদ সদস্যকে দেখা যাবে। ১০০ জন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এবং ৫ জন রাষ্ট্রপতির সুপারিশক্রমে উচ্চকক্ষের সদস্য হতে পারবেন। তবে তারা সামাজিকভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হতে পারেন বলে প্রস্তাবনায় এসেছে। কারণ, মূলধারার রাজনীতিতে এইসব সম্প্রদায় থেকে প্রতিনিধিত্ব খুব একটা দেখা দেখা যায় না। আগে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য থাকলেও এখন দুই কক্ষ মিলিয়ে ৪৫০ জন এমপি দেখা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা না হলে বাংলাদেশে পাঁচ বছর পরপর একেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হত। এবার সেই মেয়াদ কমে যাবে এক বছর। অর্থাৎ চার বছরের আইনসভা দেখা যাবে আগামীর বাংলাদেশে। এর ফলে সর্বোচ্চ চার বছরের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হবেন একজন।