তৃতীয় বছরে গড়ালো রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত। দুই বছর ধরে চলা এই লড়াইয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দু’দেশেরই। যুদ্ধের ময়দানে নিহত হয়েছে দু’পক্ষেরই কয়েক লাখ সেনা। প্রাণ গেছে হাজারও বেসামরিকের। বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মানুষ। সমঝোতা তো দূরের কথা, সময়ের সাথে সাথে ক্রমেই যেন আরও ভয়াবহ হচ্ছে সংঘাত। বিশ্লেষকদের শঙ্কা- আরও দীর্ঘ হবে যুদ্ধ। বিশ্ব বাজারে মন্দার কারণে মস্কো-কিয়েভের পাশাপাশি ভুগতে হবে পুরো বিশ্বকেও।
ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানকে কেন্দ্র করে যে চাপা উত্তেজনা ছিলো, তা বিস্ফোরিত হয় দুই বছর আগের আজকের এই দিনে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২। ভোরের আলো ফোটার আগেই ইউক্রেনজুড়ে শুরু হয় রুশ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যাকে দেখা হচ্ছে ইউরোপে সবচেয়ে বড় সামরিক সংকট হিসেবে।
অভিযানের শুরুতেই কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান নেয় ২৪ মাইল দীর্ঘ রুশ সেনাবহর। চারদিকে থেকে ঘিরে ফেলেও রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয় রাশিয়া। পিছু হটে একসময়। পরে যুদ্ধ অনেকটাই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে ইউক্রেনের রুশ অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলে। তবে, গত বছর কিয়েভকে অনেকটাই কোণঠাসা করে ফেলে মস্কো। প্রবল রুশ হামলার মুখে ফ্রন্ট লাইন থেকেও পিছু হটতে বাধ্য হয় ইউক্রেনের সেনারা।
দুই বছর ধরে চলা ভয়াবহ এ সংঘাতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দু’দেশেরই। যুদ্ধের ময়দানে কয়েক লাখ সেনা নিহতের দাবি রাশিয়া-ইউক্রেন উভয় পক্ষের।
বিভিন্ন জরিপ বলছে, বেসমারিক মারা গেছে ১০ হাজারেরও বেশি। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ইউক্রেনের প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন বাস্তুচ্যুত। দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত ৫০ লাখ আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়েছে ৬০ লাখের বেশি।
সংঘাতের প্রথম বছরই ব্যাপক ধ্বস নামে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে। দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে ইউক্রেনের এক-চতুর্থাংশ মানুষ। ধ্বংস হয়ে গেছে দেশটির কৃষিব্যবস্থা। বেশির ভাগ জমিতেই পোতা রয়েছে রাশিয়ার স্থল মাইন। যে কারণে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ কৃষিজমিই।
ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে দু’দেশেরই সামরিক ঘাঁটি ও অস্ত্রশস্ত্র। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর তথ্য মতে, গত বছর ধ্বংস হয়েছে রুশ বাহিনীর সাড়ে ৬ হাজারের বেশি ট্যাংক, প্রায় সাড়ে ১২ হাজার সাঁজোয়া যান, ১০ হাজার আর্টিলারি সিস্টেম, হাজার খানেক রকেট সিস্টেম, প্রায় ৭শ’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ৬শ’র বেশি বিমান ও হেলিকপ্টার, সাড়ে ৭ হাজার ড্রোন ও প্রায় ২৫টি যুদ্ধজাহাজ।
রাশিয়া-ইউক্রেন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সংঘাতের কারণে ভুগতে হচ্ছে গোটা বিশ্বকেই। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জ্বালানি তেল ও খাদ্য রফতানি। যার প্রভাব পড়েছে সবক্ষেত্রে। একদিকে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট।
সংঘাত বন্ধে কয়েকবার আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। উল্টো হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। পশ্চিমা অস্ত্রে পাল্টা জবাব দিয়েছে ইউক্রেনও।
তবে, বিশ্লেষকদের মত, ইসরায়েল-গাজা ইস্যুই এখন পশ্চিমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। ফলে, ইউক্রেনের প্রতি তাদের সেই সমর্থনে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।
কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দেয়া নিয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে দোটানা আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে পুতিনকে। সম্প্রতি ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর ‘আভদিভকা’র দখলে নিয়ে তার জানান দিয়েছে পুতিনবাহিনী। শিগগিরই যুদ্ধ থামার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। বরং যুদ্ধের পরিধি বাড়ার পাশাপাশি তা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।