গত কিছুদিন ধরেই জোরালো গুঞ্জন ছিল ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ব্যালন ডি’অর পাওয়ার। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে বদলে যায় গোটা পরিস্থিতি। ভিনিসিয়ুসের পরিবর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন রদ্রি। শেষ পর্যন্ত সেই জল্পনা-কল্পনাই সত্যি হলো। ২০২৪ সালের ব্যালন ডি’অর জিতলেন ম্যানচেস্টার সিটির এই স্প্যানিশ তারকা।
বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাতে প্যারিসের থিয়েটার দু শাতলেতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কারটি পেয়েছেন রদ্রি।
এসিএল চোটে বর্তমানে মাঠের বাইরে থাকা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্রাচে ভর দিয়ে মঞ্চে ওঠেন ব্যালন ডি’অর নিতে। তার হাতে ট্রফি তুলে দেন ব্যালন ডি’অরজয়ী একমাত্র আফ্রিকান ফুটবলার ও লাইবেরিয়ান কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহ।
ভিনিসিয়ুসের ব্যালন ডি’অর না পাওয়ার খবর আগেই পৌঁছে যায় গত মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। বেজায় ক্ষুব্ধ হওয়া স্প্যানিশ ক্লাবটি বয়কট করেছে এবারের অনুষ্ঠান। ব্যালন ডি’অরের বিজয়ী নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তারা। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এটা স্পষ্ট যে, ব্যালন ডি’অর-উয়েফা রিয়াল মাদ্রিদকে সম্মান করে না। আর যেখানে সম্মান নেই, রিয়াল মাদ্রিদ সেখানে যায় না।’
সেরা হওয়ার দৌড়ে রদ্রি পেছনে ফেলেন ভিনিসিয়ুস ও রিয়ালের আরেক তারকা জুড বেলিংহ্যামকে। গত মৌসুমে রিয়ালের হয়ে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস ও ইংলিশ মিডফিল্ডার বেলিংহ্যাম জেতেন লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ইংলিশ ক্লাব ম্যান সিটির জার্সিতে রদ্রি স্বাদ নেন প্রিমিয়ার লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপার। জাতীয় দল স্পেনের হয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিও উঁচিয়ে ধরেন তিনি।
ফুটবলারদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কার হলো ব্যালন ডি’অর। ফুটবল বিষয়ক সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’ এই সম্মাননা দিয়ে থাকে। ১৯৫৬ সালে এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এবার হলো ৬৮তম ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান। কালের পরিক্রমায় এটি পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুটবলের সর্বোচ্চ পুরস্কারে।
দীর্ঘ ৬৪ বছর পর ব্যালন ডি’অর পেলেন স্পেনের কোনো ফুটবলার। সবশেষ ১৯৬০ সালে এই সম্মাননা জিতেছিলেন গত বছর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা লুইস সুয়ারেজ। তিনি মিডফিল্ডার হিসেবে ইন্টার মিলান ও বার্সেলোনার মতো ক্লাবে খেলেছিলেন। স্পেনে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতে সুয়ারেজের পাশে বসলেন রদ্রি।
স্পেনের হয়ে কিংবদন্তি আলফ্রেদো দি স্তেফানোও ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। তিনি ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে দুবার উঁচিয়ে ধরেছিলেন ট্রফিটি। তবে তার জন্ম হয়েছিল আর্জেন্টিনায়। ১৯৫৬ সালে স্পেনের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন রিয়ালে ১১ বছর কাটানো এই ফরোয়ার্ড।
২৮ বছর বয়সী রদ্রির সফলতা সুখবর হয়ে এলো ম্যানচেস্টার সিটির জন্যও। ইংলিশ ক্লাবটির ইতিহাসে ব্যালন ডি’অরজয়ী প্রথম ফুটবলার তিনি।
ব্যালন ডি’অর দেওয়ার জন্য ‘ফ্রান্স ফুটবল’ এবার ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পারফরম্যান্সকে বিবেচনা করেছে। ছেলেদের বিভাগে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০০টি দেশের (৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশের আগে) একজন করে সাংবাদিক ভোট দিয়েছেন। প্রত্যেক সাংবাদিক ১০ জনকে বেছে নিতে পেরেছেন। সেই খেলোয়াড়রা ক্রমানুসারে ১৫, ১২, ১০, ৮, ৭, ৫, ৪, ৩, ২ ও ১ পয়েন্ট পেয়েছেন।
২০২৪ সালের মেয়েদের ব্যালন ডি’র জিতেছেন আইতানো বনমাতি। টানা দ্বিতীয়বার বার্সেলোনার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার এই সম্মাননা পেলেন। মেয়েদের বিভাগে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৫০টি দেশের একজন করে সাংবাদিক ভোট দিয়েছেন।
পয়েন্ট অনুসারে ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকার ৩০ ফুটবলার:
ব্যালন ডি’অর জয়ী: রদ্রি (ম্যানচেস্টার সিটি)
দ্বিতীয়: ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ)
তৃতীয়: জুড বেলিংহ্যাম (রিয়াল মাদ্রিদ)
চতুর্থ: দানি কারভাহাল (রিয়াল মাদ্রিদ)
পঞ্চম: আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি)
ষষ্ঠ: কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/রিয়াল মাদ্রিদ)
সপ্তম: লাউতারো মার্তিনেজ (ইন্টার মিলান)
অষ্টম: লামিন ইয়ামাল (বার্সেলোনা)
নবম: টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ)
দশম: হ্যারি কেইন (বায়ার্ন মিউনিখ
১১তম: ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি)
১২তম: ফ্লোরিয়ান ভিরৎজ (বায়ার লেভারকুসেন)
১৩তম: দানি ওলমো (লাইপজিগ/বার্সেলোনা)
১৪তম: আদেমোলা লুকমান (আতালান্তা)
১৫তম: নিকো উইলিয়ামস (অ্যাথলেতিক বিলবাও)
১৬তম: গ্রানিত জাকা (বায়ার লেভারকুসেন)
১৭তম: ফেদেরিকো ভালভের্দে (রিয়াল মাদ্রিদ)
১৮তম: এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা)
১৯তম: মার্টিন ওডেগার্ড (আর্সেনাল)
২০তম: হাকান চালহানোলু (ইন্টার মিলান)
২১তম: বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল)
২২তম: অ্যান্টোনিও রুডিগার (রিয়াল মাদ্রিদ)
২৩তম: রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি)
২৪তম: উইলিয়াম সালিবা (আর্সেনাল)
২৫তম: কোল পালমার (ম্যানচেস্টার সিটি/চেলসি)
২৬তম: ডেকলান রাইস (আর্সেনাল)
২৭তম: ভিতিনিয়া (পিএসজি)
২৮তম: আলেক্স গ্রিমালদো (বায়ার লেভারকুসেন)
যৌথভাবে ২৯তম: মাটস হুমেলস (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), আর্তেম দোভিক (জিরোনা/রোমা)।