হযরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেন, তোমরা মিম্বরের কাছে সমবেত হও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করলেন।
মিম্বরে আরোহণের সময় প্রথম সিঁড়িতে যখন পা রাখলেন তখন বললেন, আমিন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখলেন তখন বললেন, আমিন। এভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও বললেন, আমিন। নামাজে যখন ইমাম সাহেব সূরা ফাতেহা শেষ করলে আমরা বলি ‘আমিন’। নিজেরাও যখন নামাজ পড়ি বা তেলাওয়াত করি তখনো সূরা ফাতেহার শেষে আমিন বলি। এটা সুন্নত। ‘আমিন’ অর্থ, হে আল্লাহ, আপনি কবুল করুন।
এ জন্যই আমরা দোয়াতে আমিন বলি। সূরা ফাতেহার শেষে আমরা আমিন বলি, কিন্তু সূরা ফাতেহার শেষে কোরআন শরীফে এটা লেখা নেই। এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হাদিসে সূরা ফাতেহার শেষে আমিন পড়ার কথা এসেছে। এর ফায়দা কী?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তির ‘আমিন’ ফেরেশতাদের আমিনের সঙ্গে মিলে যায়, তার পূর্বের সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। জামে তিরমিযী : ২৪৮।
হাদিসে বলা হয়েছে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে ওঠার সময় ‘আমিন’ বললেন। এখানে তো দোয়া করা হয়নি বা সূরা ফাতেহা তেলাওয়াত করা হয়নি, তাহলে আমিন বললেন কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নামার পর সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মিম্বরে আরোহণের সময় আমরা আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি, যা আর কখনো শুনিনি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি মিম্বরে ওঠার সময় জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসেছিলেন, তিনটি বদদোয়া করেছেন। আমি সে বদদোয়াগুলোর পর আমিন বলেছি।
প্রথম বদদোয়া হলো : আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক ওই ব্যক্তি যে রমজান পেল, কিন্তু গোনাহ মাফ করাতে পারল না। দ্বিতীয় বদদোয়া হলো : ওই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক, যার সামনে আপনার নাম আলোচিত হয়েছে, অথচ সে দুরূদ পাঠ করেনি। জিব্রাইল আলাইহিস সালাম তৃতীয় বদদোয়া করেছিলেন : ওই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক যে তার বাবা-মা উভয়কে বা তাদের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে, কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেনি। মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস নং : ১৭৩১৭।
হজরত জিব্রাইল আ. পরপর এ তিনটি বদদোয়া করেছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিটি দোয়ার শেষে বলেছেন আমিন। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন। সাইয়িদুল মালাইকা ফেরেশতাকুলের সরদার দোয়া করলেন আর সাইয়িদুল কাওনাইন সমগ্র সৃষ্টি জগতের সরদার বলেছেন আমিন। এ বদদোয়া যে কবুল হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন চিন্তা করে দেখি, আমি আবার এ বদদোয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলাম না তো।