রাসেল মোল্লাঃ পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দীতার স্বরূপ। প্রচার প্রচারনার শেষ লগ্নে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পাঁচ মেয়র ও ১৫ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ৬১ জন প্রার্থী। প্রার্থীরা পৌর শহরের উন্নয়নসহ
নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ও বাসা- বাড়িতে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। প্রার্থীরা নিজ নিজ পক্ষে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন।
৯ মার্চ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটেরদিন যতই এগিয়ে আসছে নির্বাচনী প্রচারনা ততোই জমে উঠছে, সরব হচ্ছে গোটা পৌর এলাকা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা শহরসহ অলি- গলি।
২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই পৌর শহরের অলি, গলি, সড়ক সমূহ এবং কেন্দ্র সমূহের এলাকায় পোষ্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা কেন্দ্র ভিত্তিক পাড়ায় মহল্লায় ভোটের কর্মী ও সমর্থকদের সংগঠিত করে এজেন্টদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
শেষ পর্যায় কর্মী সমর্থকরা ভোটারদের মাঝে ভোটার নম্বর পৌছানোর পাশাপাশি ইবিএমএ ভোট প্রদানের নমুনা নিয়ে ভোটারদেরক ভোট দেয়া শিখাচ্ছেন।
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দী পাঁচ জনের মধ্যে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ লড়ছেন জগ প্রতীক নিয়ে এবং সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ মো. শফিকুল ইসলাম লড়ছেন মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে। এছাড়াও বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের বড় ভাই বিশিস্ট ঠিকাদার মো. আবুল কালাম আজাদ (রেল ইঞ্জিন), পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিশিস্ট ঠিকাদার মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন (নারিকেল গাছ) ও শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম সংগঠক নাসির উদ্দিন খান (কম্পিউটার) প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। প্রার্থীরা প্রচারনায় সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত আধুনিক ডিজিটাল পৌর উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাচ্ছেন।
তবে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও
সাবেক মেয়র মো. শফিকুল ইসলাম দুইজনই পটুয়াখালী পৌরসভার উন্নয়নে তাদের ভূমিকার কথা বলে ভোট চাচ্ছেন ভোটারদের কাছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক মেয়র ডাঃ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন আমি ২০১১ সালে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি । ৮ বছর মেয়রের দায়িত্বে থেকেই পটুয়াখালী পৌরসভায় আধুনিকতার
ছোঁয়া লেগেছিল। আমার আমলে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ
১০৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের
সময় ২৪০ কোটি টাকার প্রকল্প রেখে এসেছিলাম। আমি মেয়র নির্বাচিত হই তা হলে পৌরসভার যে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প আরো বৃদ্ধি করে কাজ করবো।মেয়র হলে পৌরসভায় উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবো। সকল নাগরিক সুবিধা ঘরে বসে পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে। পটুয়াখালী পৌরসভা হবে স্মার্ট পৌরসভা, মানবিক পৌরসভা,অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল ।
এদিকে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ ২০১৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীরকে হারিয়ে
মেয়র নির্বাচিত মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত পাঁচ বছর আমি পৌর মেয়র হিসেবে নয়,একজন সেবক হিসাবে মানুষের সেবা করেছি। দায়িত্ব গ্রহনের পর শত শত স্টাফদের ৯ মাস বেতন বকেয়া পরিশোধের পাশাপাশি কোটি কোটি টাকা দেনা পরিশোধ করেছি । আমি দায়িত্ব পাওয়ার পরই বৈশ্বিক করোনা দেখা দেয়। আমি করোনা প্রতিরোধে সশরীরে মাঠে থেকে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সমাগ্রী, আক্রান্তদের মাঝে বিনামূল্যে অক্সিজেন ও ঔষধ সরবরাহ করে দিন- রাত মানুষের সেবা করেছি। করোনার কারনে দুই বছর উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়নি। মাত্র তিন বছরে পটুয়াখালী পৌর শহরকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছি। পৌরসভা এখন উন্নয়নের দিক থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাথে তুলনা করা যায়। পটুয়াখালী পৌরসভা এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
তারপরও এই পৌরসভায় এখনও তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাকি রয়েছে।
মহিউদ্দিন আরও বলেন, তার সময়কালে পটুয়াখালী জেলায় মেঘা মেঘা প্রকল্পের কাজ হয়েছে, যা এখনও চলমান। আগামীতে পটুয়াখালী জেলা ইপিজেড ও শিল্প নগরীতে উন্নীত হতে যাচ্ছে। আগামী ১০ বছর পর কমপক্ষে ২৫ লাখ লোকের বসবাস হবে, সেটি মাথায় রেখেই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমি আরেকবার মেয়র হতে পারলে পটুয়াখালী শহরকে ঢেলে সাজাবো। আমার সময় যে উন্নয়ন হয়েছে, বিগত একশ বছরে এতো উন্নয়ন হয়নি। এখন দেশ- বিদেশের লোক পটুয়াখালী শহর দেখতে আসে, বেড়াতে আসে।
১৮৯২ সালের প্রতিষ্ঠিত পটুয়াখালী
পৌরসভা ১৯৮৯ সালের ৫ আগষ্ট প্রথম শ্রেনীতে উন্নীত হয় । পৌরসভার আয়তন ৩০ বর্গকিলোমিটার । ভোটার সংখ্যা ৫০,৬৯৯। এর মধ্যে নারী ভোটার ২৬ হাজার ৭৫০
জন , পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৯৪৭ জন এবং হিজড়া ভোটার ২ জন।
মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন বলেন, তিনি প্রচারনায় পিছিয়ে নেই। এবার প্রথম পৌর মেয়র নির্বাচনে এসেছেন তিনি। ইতিমধ্যে
তিনি পৌর এলাকায় নিজেকে জানান দিতে পোষ্টার ঝুলিয়েছেন চালাচ্ছেন প্রচার মাইকিং সমানতালপ চলছে। ভোটারদের কাছে যাচ্ছি এবং ভোট চাচ্ছি। নির্বাচনে তিনিও আশাবাদি।
অপর মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিন খান
নিজে তার প্রতীকসহ নির্বাচনী ইশতেহারের কাগজ ভোটারদের মাঝে বিলি করে প্রচারনা চালাচ্ছেন।
তবে অপর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের নির্বাচনী প্রচারনা নেই বললেই চলে। তিনি তার ছোট ভাই মহিউদ্দিনের জগ মার্কার পক্ষে কাজ করছেন।
এ নির্বাচনে সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক গনসংযোগ করেছেন। এবার প্রার্থীদের লিফলেট নিয়ে প্রচারনায় মহিলা কর্মী ও সমর্থকদের সংখ্যা অনেক অনেক বেশী লক্ষনীয়।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খান আবি শাহানুর খান জানান,
৯ মার্চ সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ২৪ টি কেন্দ্রে বিরতিহীন ইবিএমএ ভোট গ্রহন চলবে।
পৌরসভা নির্বাচনে এবার মেয়র পদে ৫জন ও কাউন্সিলর পদে ৪১ জন ও সংরক্ষিত নারী
কাউন্সিলর পদে ১৫ জন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন।