ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ পশ্চিমাদের। কিন্তু বিপদে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। কারণ, এখন আর লোহিত সাগর বা রেড সি দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পাঠানো যাবে না। যেতে হবে আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে। এতে শিপমেন্ট পৌঁছাতে লাগবে বাড়তি ১০ দিন। খরচ বাড়বে প্রায় ৪০ ভাগ।
তার ওপর বাংলাদেশের বন্দর থেকে প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারে বাড়তি সারচার্জ আরোপ করেছে সিএমএ সিজিএম, জাপানি ওশান নেটওয়ার্ক কিংবা হ্যাপাগ-লয়েডের মতো শিপিং কোম্পানি।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, আপাতত অর্ডার বাতিল না করলেও সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বিকল্প দেশে চলে যাবেন বিদেশি ক্রেতারা।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, বিভিন্ন দেশের জাহাজ মালিকরা ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে। সামনে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে ক্রেতারা এখন নিকটবর্তী কোনো দেশ, যেমন তুরস্ক বা অন্য কোথাও পণ্য পেলে সেদিকে ঝুঁকছে। অর্থাৎ যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে তাদের দেরি করার সুযোগ নেই, সেক্ষেত্রে তারা কাছের দেশগুলোতে যাচ্ছে।
এর আগে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে কৃষ্ণ সাগরে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। সেই প্রভাবে তৈরি হওয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ে এখনও ভুগছে বাংলাদেশ।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, হুথিদের সাথে পশ্চিমাদের সংঘাতে আঞ্চলিক সংকট তৈরি হলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। মূল্যস্ফীতির নতুন ধাক্কা খাবে বিশ্ব ও বাংলাদেশ।
এই প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, একমাত্র ইরান এখানে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যদি তারা সরাসরি এতে জড়িত হয়। কিন্তু তারা তা চাচ্ছে না। তাই আমি মনে করি, এটার প্রভাব তেমন পড়বে না।
রফতানিকারকরা এ-ও আশঙ্কা করছেন, লোহিত সাগরে সংঘাত না থামলে জাহাজে পণ্য পরিবহনে কনটেইনার সঙ্কট হবে।
উল্লেখ্য, লোহিত সাগর হয়ে সুয়েজ খাল পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরের মাধ্যমে পশ্চিমে প্রবেশ করে জাহাজ। এই রুট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পৌঁছে ২৬ দিনে। এখন যা আরও ১০ দিন বেশি লাগবে।