বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে রাজধানীতে ৯ জনসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১০০ জনের নিহত হয়েছে। ঢাকার বাইরে ১৯ জেলায় পুলিশসহ অন্তত ৯১ জনের নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই হলেন শিক্ষার্থী। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৩ জন, লক্ষ্মীপুরে ১০ জন, ফেনীতে ৮ জন, নরসিংদীতে ৬ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, মুন্সীগঞ্জে ৪ জন, রংপুরে ৫ জন, সিলেটে ৬ জন, মাগুরায় ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, বগুড়ায় ৪ জন, কুমিল্লায় ৪ জন, বরিশালে ২ জন, শেরপুরে ২ জন, ভোলায় ১ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, সাভারে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, কক্সবাজারে ১ জন, কেরানীগঞ্জ ১ জন রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাইন্সল্যাবে ১ জনসহ ঢাকায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে সাইন্সল্যাব এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল ১১টার দিকে বাটা সিগন্যালের দিক থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল সাইন্সল্যাবের দিকে আসতে থাকে এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পিছু হটে।
মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে ৪ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গুলিবিদ্ধ একজন ঢাকায় আনার পথে সিরাজখানে মারা যান একজন। নিহতদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদের অধিকাংশের বয়স ২০-২৫ বছরের মধ্যে।
মাগুরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষে ৪ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। রোববার সকাল ১১ টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, সকালে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন রাব্বী।
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে বগুড়ায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে দুজন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে তারা।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান। তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন। তার নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)। অন্যদিকে আহত চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হলে ৩ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা এই গুলি চালান। বিক্ষোভকারীরা এরপর তার গাড়ি পুড়িয়ে দেন। এই ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক।
লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫০ জন। সিরাজগঞ্জে ৯ জন নিহত হয়েছেন। বরিশালে নিহত হয়েছেন ২ জন। জয়পুরহাটে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে কুমিল্লায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জে নিহত ৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ভোলায় ৩ জন ফেনিতে ৭ জন এবং ধামরাইতে ১ জন নিহত হয়েছেন।