স্টাফ রিপোর্টারঃ মুক্তিযুদ্ধে যেসব দেশ সমর্থন দেয়নি তাদের চক্রান্ত এখনো থামেনি মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছে। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দেয়নি, তাদের চক্রান্ত এখনও থেমে যায়নি। আর যেহেতু তারা জানে আমরা কারো কাছে মাথা নত করি না, সেজন্য চক্রান্ত আরো বেশি। গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো কাছে মাথা নত করি না, কারো কাছে মাথা নত করব না। ২০০১ সালের নির্বাচন আমি গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল তাদের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭১-এ মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তাদের সালাম জানাই। আপনাদের আত্মত্যাগে আমাদের দেশকে পেয়েছি। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হয়। ইয়াহিয়ার পতন হয়। ভুট্টো ক্ষমতায় আসে। আন্তর্জাতিক চাপে বাধ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। তিনি দেশে ফিরে এক যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ দেখেন। রাস্তা ঘাট নেই। সবই ভাঙা। এ দেশে যুদ্ধকালীন সময় ফসল হয়নি, গোলায় এক ফোটা ধান ছিল না। কারণ, পাকিস্তানিরা আগুন দিয়ে গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এক পয়সাও রিজার্ভ ছিল না। শূন্য হাতে ধ্বংস স্তূপে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা গড়তে শুরু করেন জাতির পিতা। তিন বছর সাত মাসে জাতিসংঘে দেশকে স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হবে না। অবৈধভাবে প্রেসিডেন্ট হন জিয়াউর রহমান। দেশের বাইরে রিফিউজি হিসেবে আমাদের থাকতে হয়েছিল। ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার সুযোগ পাই। সমস্ত দেশে ঘুরে বেড়াই। দেশের উন্নয়নে কাজ করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই সরকার গঠন করে দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছি। ২১ বছর পর সরকারে এসেছি। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। বিদ্যুৎ চাহিদা ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি। মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। তারা ক্ষমতায় আসা মানে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, লুটপাট আর দুঃশাসন। গ্যাস বিক্রি করতে দেইনি বলে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় আসি। বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচনে আসেনি। আর ২০১৮ সালে প্রার্থীর মনোনয়ন বাণিজ্য করে নিজে থেকে সরে যায় তারা। তবে আওয়ামী লীগ ১৫ বছর সরকারে আছে। দেশের উন্নয়ন করেছে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। ৮ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টার করেছি। প্রত্যেকের হাতে মোবাইল ফোন দিয়েছি। ব্রডব্যান্ড চালু করেছি। ওয়াইফাই এনে দিয়েছি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসে উপার্জন করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। করোনায় আমি বসে থাকিনি অনলাইনে সভা করেছি।
৩৩টি জেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। ৮ লাখ ৪১ হাজারেরও বেশি পরিবার ঘর পেয়েছে। আমরাই বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করেছি। স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা ভাতা দিচ্ছি। সারাদেশে বিনামূল্যে বই দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, বাংলাদশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম. মোজাম্মেল হক, জাতীয় শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক কে,এম আজম খসরু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস সহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সভায়, বৃহত্তর জেলার আওয়ামী লীগের ঘরোনার সকলের উপস্থিতি এবং মাগুরার নৌকার মাঝি মো. সাকিব আল হাসান ও প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে সকলেই হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন। ফরিদপুরবাসীসহ আশপাশের এলাকার মানুষের ধারণা ছিল প্রধানমন্ত্রী এ জেলায় অন্ততপক্ষে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিবেন। হতাশ হয়ে ঘরে ফিরল সবাই। অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী আগমন উপলক্ষে জেলা সদরের প্রায় ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যোকার প্রধান সড়ক লিংক সড়কের সমস্ত দোকানপাট সহ সকল খাবার হোটেল রেস্তোরাঁও বন্ধ ছিল। সকাল ১১টার পর থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত ছিল জেলা সদরের সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকায় পথচারী হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের পোহাতে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। খোলা ছিল না পথে পথে বসা বহু কাঁচামাল ও ফল ফলাদির দোকাপাট। জেলা সদরের চিত্র ছিল অঘোষিত হরতালে মতো। তবে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত এবং সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ ও উৎসাহ। জেলার কথাও কোনো অশান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বৃহত্তর ফরিদপুরের তথা ৪টি আসনের নৌকার এমপি প্রার্থী ও হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল জনাকীর্ণ অবস্থান। সাথে আলাদা আকর্ষণ ছিল, মাগুরা-১ আসনের এমপি প্রার্থী মো. সাকিব আল হাসান।