স্টাফ রিপোর্টারঃ ১ জানুয়ারি উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন বই। তবে তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে ঘটেছে কলঙ্কজনক ঘটনা। মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো বেশকিছু বইয়ে পাওয়া গেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবী দূর্গার ছবি। সাতক্ষীরার দুটি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব বই পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবকরা। ঘটনা আচ করতে পেরে একদিন পরই শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বইগুলো ফিরিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)র চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এটি ছাপাখানার ভুল। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন তিনি। জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মাধ্যমে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় নতুন বই। নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা ফিরে যায় বাড়িতে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ঠাকুরগাঁও জেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর হাতে যে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বই তুলে দেয়া হয়, সেগুলোর পেছনের মলাটের ভেতরের পৃষ্ঠায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবী দূর্গার ছবি ছাপানো হয়েছে। বিষয়টি চোখে পড়ার পর দ্রুতই অভিভাবক ও সচেতন ব্যক্তিরা সমালোচনা মুখর হয়ে উঠেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইটির ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেন অনেকে। এটিকে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত, আবার অনেকে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে দাবি করেন। বিষয়টি জানার পর সাতক্ষীরা ও ঠাকুরগাঁওয়ের সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইটি ফেরত নেয় শিক্ষকরা। যারা স্কুলে আসেননি তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও ফেরত আনা হয় এসব বই।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমি জানান, এটা তার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে, বইটি ফেরত নিতে জেলার সব উপজেলায় আলাদা আলাদাভাবে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে তা সম্পন্ন হয়েছে বলা যায়। এছাড়া, দ্রুত শিক্ষার্থীদের হাতে পুনরায় বই পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ত্রুটি পাওয়ায় বইটি ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। সংশোধনের পর তা আবারো বিতরণ করা হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে ৫-১০টি স্কুলে এ ধরনের ভুল বই পাওয়ার খবর জেনেছি। এর পরপরই আমরা সেগুলো তুলে এনেছি। তবে বইয়ের সংখ্যা কত তা তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারছি না।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের আমানউল্লাহ আমান নামে একজন অভিভাবক ভুলে ছাপা বইটির ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে দ্রুত সংশোধনী দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তৃতীয় শ্রেণির বইটিতে এমন ভুল দেখে খোঁজ নিলাম। দেখলাম আমাদের আশপাশের দুটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ে একই ভুল। অন্য এলাকার খবর আমি জানি না।
এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এটা ছাপাখানার ভুল। ভুলটা হলো- ইসলাম শিক্ষা বইয়ের উল্টো পাশে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের ইংরেজি ভার্সনের মলাট রয়ে গেছে। এটা জানার পরপরই আমরা বই তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। শুনেছি ৪০টি বইয়ে এমন ভুল হয়েছে। সাতক্ষীরার একটি স্কুলে এমন ভুল ছাপা বই পাওয়া গেছে। নতুন করে বই ছাপিয়ে দ্রুত শিক্ষার্থীদের বইটি দেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এনসিটিবির বিতরণ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, এখন ওয়েব মেশিনে বই ছাপা হয়। যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে কয়েক হাজার বইয়ে একই রকম ভুল হওয়ার কথা। কিন্তু অল্প কিছু বইয়ে এ ধরনের ভুল হওয়ায় সন্দেহ বাড়ছে। এটা প্রেসের ভুল নাকি অন্য কোনো কিছু আছে, সেটা তদন্ত করা প্রয়োজন।