বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্দান্ত ঢাকাকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ফের দখলে নিয়েছে খুলনা টাইগার্স। আগে ব্যাট করতে নেমে সায়ুম আইয়ুব এবং নাইম শেখের দারুণ শুরুর পরও মিডল অর্ডারের চরম ব্যর্থতায় দুর্দান্ত ঢাকার ইনিংস থামে ১৩০ রানে। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় খুলনা টাইগার্সকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন এভিন লুইস ও আনামুল হক বিজয়। ক্র্যাম্প নিয়ে লুইস মাঠের বাইরে গেলেও ৩২ বল আগেই খুলনার ১০ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন বিজয় ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। ফিফটি হাঁকিয়ে বিজয় শেষ পর্যন্ত ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই সাবধানী ব্যাটিং করেন ঢাকার দুই ওপেনার সায়ুম আইয়ুব এবং নাইম শেখ। মাঝে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করলেও খুব বেশি ফলপ্রসূ হয়নি। যদিও পাওয়ারপ্লেতে কোনো উইকেট হারায়নি তারা। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে নাইমকে ফেরানোর সুযোগ থাকলেও মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের বলে দারুণ প্রচেষ্টার পরও ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি আনামুল হক বিজয়। প্রথম ৬ ওভার শেষ হওয়ার পরই অবশ্য ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ঢাকার ওপেনাররা।
যেখানে সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্বক ছিলেন নাইম। ইনিংসের নবম ওভারে বল হাতে তুলে নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের সেই ওভারে দুই ছক্কা ও এক চার মারার পর আবারও উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন নাইম। অফ স্টাম্পের বাইরের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে মিড অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে থাকা এভিন লুইসের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ২১ বলে ৪১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে নাইম আউট হন।
নাইম ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সায়ুমও। পরের ওভারে ওয়াসিম জুনিয়রের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে টপ এজ হয়ে বল সরাসরি মাথা বরাবর উপরে উঠে গেলে সেটা সহজেই লুফে নেন উইকেটকিপার বিজয়। তাতে উইকেটে থিতু হওয়া সায়ুম ফেরেন ৩৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে। এরপর ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি গুলবাদিন নাইব।
মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ নাওয়াজের হাতে ধরা পড়েন ৩ রান করা এই ব্যাটার। একই ওভারে সাজঘরে ফেরেন ৩ রান করা এসএম মেহেরব। দলের রান একশ হওয়ার আগে আউট হন ইরফান শুক্কুর। নাওয়াজের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ঢাকার উইকেটকিপার ব্যাটার। পরের ওভারে নাওয়াজের বলে আউট হন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ঢাকার অধিনায়ক রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
তাতে করে ভালো শুরুর পরও ২১ রানের ব্যবধানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ঢাকা। শেষ দিকে আরাফাত সানির অপরাজিত ১৫ এবং অ্যালেক্স রসের ২১ রানের ইনিংসে ১৩০ রানের পুঁজি পায় ঢাকা। খুলনার হয়ে তিনটি উইকেট নেন নাওয়াজ। এ ছাড়া দু’টি করে উইকেট শিকার করেছেন ওয়াসিম জুনিয়র ও মুকিদুল মুগ্ধ।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই খুলনার দুই ওপেনারের দাপট চলে। পাওয়ারপ্লের প্রথম ৬ ওভারে আনামুল হক বিজয়, এভিন লুইস ও আফিফ হোসেন মিলে করেন ৬৬ রান। তবে চোটে পড়ে লুইসকে ফিরে যেতে হয় ব্যক্তিগত ২৬ রানে। মাত্র ১৩ বলেই এই ঝড়ো ইনিংস খেলে যান লুইস। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ইনিংস সাজান বাঁহাতি এই ওপেনার। এরপর অধিনায়ক বিজয়কে সঙ্গ দিতে আসেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। এই জুটিতে ১০ ওভারেই খুলনা পেয়ে যায় ৯৬ রান। বাকি ১০ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান।
সহজ কাজটা সহজভাবেই শেষ করে মাঠ ছাড়েন বিজয়-আফিফ। ৩৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করে বিজয় শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৮ রানে। অপর প্রান্তে থাকা আফিফ হোসেন খেলেন ৩৭রানের হার-না-মানা ইনিংস। এবারের বিপিএলে বিজয় পেয়েছেন নিজের দ্বিতীয় ফিফটির দেখা। এবং দুইবারই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন।