মুহাররম মাসের সবচেয়ে মহিমান্বিত দিন হচ্ছে ‘ইয়াওমে আশুরা’ তথা মুহাররমের দশ তারিখ। হাদিসে আশুরার দিনের অনেক ফজিলত বিবৃত হয়েছে। এমনকি ইসলাম-পূর্ব আরব জাহেলি সমাজে এবং আহলে কিতাব- ইহুদি-নাসারাদের মাঝেও ছিল এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন : (জাহেলি সমাজে) লোকেরা রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোযা রাখত। এ দিন কাবায় গেলাফ জড়ানো হতো। এরপর যখন রমযানের রোযা ফরজ হলো তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে এ দিন রোযা রাখতে চায় সে রাখুক। যে না চায় না রাখুক। (সহীহ বুখারী : ১৫৯২)।
এ হাদিসদ্বয় থেকে বুঝে আসেÑ জাহেলি সমাজে এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। এ দিনে তারা কাবা শরীফে গেলাফ জড়াত। এ দিন তারা রোযা রাখত। নবীজীও এ দিন রোযা রাখতেন। হিজরতের পরও এ দিন রোযা রাখতেন। রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার পূর্বে এ দিনের রোযা ফরজ ছিল। রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার পর এ দিন রোযা রাখা এখন মুস্তাহাব।
এরপর যখন রাসূলে কারীম (সা.) হিজরত করে মদিনা মুনাওয়ারায় চলে আসেন দেখেন, মদিনার আহলে কিতাব ইহুদিরাও এ দিনে রোযা রাখছে। এ দিনকে তারা বিশেষভাবে উদযাপন করছে। নবীজী তাদের জিজ্ঞাসা করলেন : এ দিনে তোমরা কী জন্য রোযা রাখছ? তারা বলল : এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিবস। আল্লাহ তা‘আলা এ দিনে হযরত মূসা আ. ও তাঁর কওমকে (ফেরাউনের কবল থেকে) মুক্তি দিয়েছেন।
এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ (দরিয়ায়) নিমজ্জিত করেছেন। এরপর হযরত মূসা আ. এ দিনে শুকরিয়া আদায় স্বরূপ রোযা রাখতেন। তাই আমরাও রোযা রাখি। নবীজী এ শুনে বললেন : হযরত মূসা আ.-এর অনুসরণের ক্ষেত্রে তো আমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। এরপর নবীজী নিজেও রোযা রাখলেন এবং অন্যদের রোযা রাখতে বললেন। (সহীহ মুসলিম : ১১৩০)।
ইহুদিদের নিকট এ দিনটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এ দিনটিকে তারা ঈদের মতো উদযাপন করত। হযরত আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত : আশুরার দিন এমন একটি দিন, যে দিনকে ইহুদিরা সম্মান করত এবং এ দিনকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা এ দিনে রোযা রাখ। (সহীহ মুসলিম : ১১৩১)।