বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই কোটা বিরোধী আন্দোলন চলছিল দেশে। তবে বৃহস্পতিবার এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এর আগেও আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কথা সামনে এসেছিল। তবে বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে আরও কয়েক ডজন তাজা প্রাণ নিষ্প্রাণ হয়ে গেল পুলিশ বা ব়্যাবের গুলিতে।
বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রে দাবি, শুধুমাত্র বৃহস্পতিতেই ছাত্রমৃত্যুর সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে দেশজুড়ে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে একের পর এক ছাত্রের লাশ। বহু মায়ের কান্না এবং আর্তনাদে ভরে উঠেছে হাসপাতাল চত্বরগুলি। ছাত্র-ছাত্রীদের হাহাকারে কান পাতা দায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে। তবে তাও আন্দোলন জারি থেকেছে।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢাকা পুলিশ এবং ব়্যাবের নির্মম কর্মকাণ্ডের একের পর এক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছ দিনভর। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজসাহী সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছে ছাত্রদের ক্ষোভ। আর পুলিশ রাস্তায় নেমে আন্দোলকারীদের দমন করার চেষ্টায় একের পর এক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। খালি হয়েছে বহু মায়ের কোল।
বার্তা সংস্থা এএফপি-র রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গতকাল বাংলাদেশ জুড়ে ২৫ জনের বেশি পড়ুয়া মারা গিয়েছে। অসমর্থিত সূত্রে সেই সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। তবে এএফপি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে কোটা-বিরোধী আন্দোলনে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩২ জন পড়ুয়ার। সেখানে মারমুখী আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। তাতে জখম হয়েছেন বহু পুলিশকর্মী, ব়্যাব সদস্য। জ্বলিয়ে দেওয়া হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের গাড়ি।
এদিকে বিভিন্ন ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ঢাকার উত্তরা, মীরপুর এলাকায় সাঁজোয়া যান নামিয়েছে বাংলাদেশ সেনা। ক্যানটনমেন্ট থেকে কাতারে কাতারে সামরিক যান রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছেছে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দমন করতে। এদিকে গতকাল বাংলাদেশ টিভির স্টেশনে হামলা চালিয়ে সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। শহরের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে দেখা গিয়েছে। রাস্তায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে দেখা গিয়েছে, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে ছররা গুলি ছুড়তে দেখা গিয়েছে।
এদিকে রাতের দিকে ঢাকা সহ দেশের প্রায় সর্বত্রই ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট জারি করে হাসিনা সরকার। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সেখানে। এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, কোটা-বিরোধী মামলার পরবর্তী শুনানি রবিবার হতে চলেছে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে। তবে এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর কোটা-বিরোধী আন্দোলন পরিণত হয়েছে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দায় নিয়ে হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সরব বাংলাদেশের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।