- নিজস্ব প্রতিবেদক: বরগুনার বামনা উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালের কোনো রকম বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সেটি তালাবদ্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুজ্জামান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান। এর আগের রাতে ভুল অপারেশনে এক প্রসূতি ও তাঁর গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগে তাঁরা এই অভিযান পরিচালনা করেন।
ভুল চিকিৎসায় নিহত ওই প্রসূতির নাম মেঘলা আক্তার (২০)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের উত্তর রামনা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম তারেকের স্ত্রী।
উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের কলেজ রোডের সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের এই ক্লিনিকটির চেয়ারম্যান স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও ওই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি প্রভাব খাটিয়ে লাইসেন্স পাওয়ার আগেই এখানে শুরু করেন সিজারিয়ানসহ বিভিন্ন চিকিত্সা কার্যক্রম।
এদিকে গতকাল বিকেলে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বাবা গুদিকাটা গ্রামের সগির হাওলাদার বামনা থানায় হাসপাতালটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পরিচালক রেজাউল ইসলামসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এবং ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলামের মালিকানাধীন এই হাসপাতালে সোমবার বিকেলে মেঘলা আক্তারকে ভর্তি করা হয়।
চিকিত্সক হাসপাতালে আসতে দেরি হওয়ায় ওই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (অ্যানেসথেসিয়া সার্জন) ডা. সবুজ কুমার দাস নিজেই অপারেশন শুরু করেন। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পরপরই রোগী মারা যান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে মৃত রোগীকে নিয়ে রাতেই উন্নত চিকিত্সার জন্য মঠবাড়িয়া ইসলামিয়া হাসপাতালে যান। কিন্তু রোগী অনেক আগেই মারা যাওয়ায় ওই হাসপাতালে লাশ গ্রহণ করেনি।
পরে তাঁরা নিহতের বাবা লাশটি বাড়িতে নিয়ে যান। এই ঘটনার পর থেকে সুন্দরবন হাসপাতালের মালিক, ডাক্তার, নার্সসহ সব স্টাফ পালিয়ে যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার জন্য বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। তাদের ভুল চিকিত্সার কারণে প্রসূতি মেঘলা আক্তার ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তাই আমরা সেখানে তালা লাগিয়ে দিয়েছি।
’অভিযুক্ত হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ অন্য পরিচালকদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারেক হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’